সারাদিন বোটে বসে বসে বার্ডিং করে, পূর্বঘাট পর্বত পরিমাণ খাবার দাবার খেয়ে ক্লান্ত হবার ভান করে রিসোর্টে ফিরে একটু চিৎপাত হয়ে শুয়েছিলাম। এমনসময় সহবার্ডার ফোন করলেন, ফিসফিস করে বললেন ‘নাইটজার পাওয়া গেছে, এসো।’ পুরো সেই ‘বর এসেছে, উলু দে’ কেস। বাংলা সিনেমার তুলসী চক্রবর্তীর মতন ফতুয়া,ধুতি মার্কা জামাকাপড় গায়ে ছিল, তখন আর ‘অজ্জিনাল’ বার্ডার সাজার সময় ছিলোনা। কামানের ব্যাটারী চার্জ হচ্ছিল। কোনোমতে সব নিয়ে চটি পায়ে ছুটলাম। কে যেন পেছন থেকে বললো ‘আশেপাশে কালাচ আছে অনেক, সাবধানে যাবেন’ ! ভাবলাম এখন করোনার মার্কেটে কালাচের কামড়ে মরলে আর লজ্জার সীমা থাকবেনা।
বড়ো রাস্তায় উঠে দেখলাম একজায়গায় সবাই হামা দিয়ে, বসে দাঁড়িয়ে, উঁচু হয়ে নীচু হয়ে কি দেখছেন! আমি যেতেই সকলে আমাকে জায়গা ছেড়ে দিলো, ‘এসে গেছে কণের ছোটবোন, বরের আসল শ্যালিকা, দাও দাও ওকে বর দেখতে দাও।’ (আসলে সকলের আগে দেখা, ছবি তোলা সব কমপ্লিট হয়ে গেছিলো) আমি উঁকি দিয়ে দেখি সেই নাইটজার। লার্জ টেইল্ড। একে আগেও দেখেছি। ফুটফুটে ভোরে, চাঁদিফাটা মধ্যাহ্নে, কিন্তু রাতের অন্ধকারে এই প্রথম দেখলাম। শ্বাপদসংকুল অরণ্যের উল্টোদিকের জনবসতির মধ্যে ফাঁকা এক গ্রাম্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাতচরা পাখির ডাক, পোকার শব্দ, ছেঁড়া মেঘের ফাঁক দিয়ে হঠাৎ দেখা পাওয়া গোল চাঁদের আলোয় মাখামাখি রাতে, ছলছলে নদীর মধ্যে মিটিমিটি আলো জ্বলা বোটের পাশে কুচকুচে গাছের পাতার মধ্যে ডাক শুনে শুনে পাখিটাকে স্পট করা, তারপর টর্চ নিয়ে খোঁজা এবং ছবি তুলে টর্চ বন্ধ করে ওই রাতটাকে নিজস্ব স্বাভাবিকতায় রাতের মতন নিস্তব্ধ অথচ বাঙময় থাকতে দেওয়া….এটা একটা অভিজ্ঞতা নয়, বরং অনুভূতি বলা যায়।
0 comments on “Large tailed nightjar in Sundarban”Add yours →