Kanha Tiger Trip and a different Experience

বাঘ দেখার অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কানহায়

একটি ফাঁকা জায়গায় একটু চিনি ফেলে দেখবেন, ঠিক একটা পিঁপড়ে এসে যাবে। সে সব ঘুরে ঘুরে দেখে শুনে কোত্থেকে আরো দুই চারটিকে জুটিয়ে ফেলবে। তারপর একটা আস্ত পিঁপড়ের লাইন তৈরী হবে। এই লাইনটা কিভাবে চিনির কাছে এসে পৌঁছাবে? ওই প্রথম, দ্বিতীয় পিঁপড়ে লাইনের সব পিঁপড়ের মুখে মুখ লাগিয়ে কিছু বলতে বলতে যাবে। আসুন ওই কথোপকথনের কিছু অংশ শুনে নেই।

Breakfast point

পিঁপড়ে ১: কুছ মিলা?
পিঁপড়ে ২: হা, আট নম্বর কে পাস।
পিঁপড়ে ১: কিতনে?
পিঁপড়ে ২: দো থে।
ব্যাস দেখতে দেখতে চিনির সামনে পিঁপড়ের লাইন। কানহায় টাইগার ট্রিপ নিয়ে বিশ্বাস করুন এর চেয়ে ভালো বোধগম্য উদাহরণ আর পেলাম না।

Jeeps are waiting for sighting

কানহা, মধ্যপ্রদেশের বৃহত্তম জঙ্গল, খুব ইচ্ছে হতো যেন যেতে পারি,কিন্তু হয়নি কখনো। ২০১২ সাল থেকে আমি বিভিন্ন লোকের থেকে প্ল্যানিং, কোটেশন এইসব নিতাম। তারপর কিডনী বিক্রী করতে হবে এই ভয়ে কখনো সেই প্ল্যান সাকসেসফুল হয়নি।

এই অব্দি পড়ে অনেকে বলবেন ‘ওমা আমরা তো গেসলাম, হ্যাঁ লক্ষীর ভাঁড়ের জমানো পয়সা দিয়েই হয়ে গেছে।দুটো কিডনী নিয়েই তো ঘুরছি।ওরোম তো কোনো ব্যাপার না।’ যতটুকু জানলাম বা বুঝলাম, পয়েন্ট ওয়াইস বলার চেষ্টা করছি মাত্র।

১) কিডনী বিক্রী

Safari Jeeps

প্রশ্ন: আমরাও জঙ্গলে গেছিলাম, অতো খরচ তো হয়নি! উত্তর: আপনি কি একাধিক সাফারী করেছিলেন? সিঙ্গল সিট নিয়েছিলেন নাকি পুরো গাড়ি? অভিজ্ঞতম গাইডকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বুক করেছিলেন? বাঘছাল আঁকা বিছানায় শুয়ে বাঘ বাঘ মুড এনেছিলেন আগে থেকে? (নো ডুয়াল মিনিং প্লিজ, ভালো রিসোর্টগুলোতে ভাতের হাঁড়ি নামাবার ন্যাকড়াও বাঘপ্রিন্টের হয়

২) লাকি আলী

Morning at Kanha

প্রশ্ন: ‘আপনি কত লাকি! আমরাও অমুক জঙ্গলে গেছি, বাঘ পাইনি।’উত্তর: কটা সাফারী করেছিলেন? জব্বলপুরে পিসিমনির বাড়ি যাবার আগে একটা বিকেল? নাকি হন্যে হয়ে পাঁচটা সাতটা সাফারী করে গেছেন? সকালে সাড়ে তিনটেয় উঠে পটি যাবার ইচ্ছে, সিগারেট ধরাবার ইচ্ছে, লেপ মুড়ি দেবার ইচ্ছে বিসর্জন দিয়ে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন ফার্স্ট লাইন ধরার জন্য?

৩) গাছ পাকা

DJ4 at Kanha, Mukki

প্রশ্ন: আমাদের গাইডটা বেশী পাকা ছিল, অপারেটর ছিল আরো পাকা। ওদের জন্যই আমরা বাঘ পেলাম না। উত্তর: ধরুন আমি প্রফেশনাল মুচি। রাস্তার মোড়ে বসে জুতো সেলাই করে সংসার চালাচ্ছি গত বিশ বছর। আজ কোত্থেকে এক বিষ দর্জি এসে বললো সেলাই আমিও পারি। তোকে জুতো সেলাই আমি শেখাবো, ব্যাস হয়ে গেল। না হবে ওটা জুতো, না বারমুডা! পায়ে গলাবেন না কোমরে তুলবেন সেটা বোঝা যাবেনা। অতএব নিজের পাকামিটুকু নিজের পকেটে রাখাই ভালো। প্রফেশনালকে সন্মান দেওয়া উচিৎ। ওনারা ভূমিপুত্র। বহুবছর ধরে হনুমানের ডাকের তারতম্য বুঝে বাঘের উপস্থিতি বুঝছেন। হরিণের চাহনি দেখে আন্দাজ করছেন তার ভয়ের উৎস, ধুলোর ওপর মিলিয়ে আসা দাগ দেখে বুঝে যাচ্ছেন বাঘ কি শিকার করে কোথায় টেনে নিয়ে গেছে….বাঘ দেখতে না পাবার জন্য ওনাদের দোষারোপ ঠিক নয়। ওয়াইল্ডলাইফ চিড়িয়াখানা নয়, যে চীনাবাদাম আর কমলালেবু নিয়ে গিয়ে খাঁচার সামনে গিয়ে হাঁক দিলে আসবে।

৪) পাখিগিরি

Pied bushchat male

প্রশ্ন: ওমা তুমি এত পাখি কি করে পেলে? আমরা কেন পেলাম না?উত্তর : ওই বহুবছর ধরে চেষ্টা করতে করতে দেখতে শিখেছি। আমি ২০% দেখতে পেলে, আরো যাঁরা বেশী অভিজ্ঞ বা গাইডরা হয়তো আরো বেশী স্পট করতে পারেন। কোনো ম্যাজিক, দৈব ক্ষমতা, স্বপ্নে পাওয়া মাদুলি, টোটকা কিচ্ছু নেই, একটু নিষ্ঠা এবং ইচ্ছে এবং সময় ব্যাস। ধীরে ধীরে বেসিক থেকে এডভান্স লেভেলে উত্তীর্ণ হওয়া যায়।

৫) থাকা খাওয়া

Kanha motel Chandan

প্রশ্ন : কোথায় ছিলেন? গাইডের নম্বর কি?উত্তর: আমি ছিলাম মোটেল চন্দন। আশেপাশে আরো কোটি কোটি হোটেল আছে, রিসোর্ট আছে। ইন্টারনেটে বাজেট অনুযায়ী দেখে শুনে নেবেন। গাইডের নম্বর নেইনি। আসলে আমি যেহেতু নিজে কিছু এরেঞ্জ করিনি, তাই এসবের প্রয়োজন হয়নি। এর ভিতরে অনেকগুলি জানা না জানার স্তর থাকে, যেগুলো সম্বন্ধে আগে আলোচনা করেছি। কোন গেটের কাছে থাকবো, কোন জোনে ঘুরবো, যাবার পথে কোন জোন কভার হবে এসব চুলচেরা বিশ্লেষণ আমি অত জানতামও না, আর এখন জেনেও বিশেষ লাভ হয়নি। ওইসব গুণে গেঁথে বিচার করে সময় কাটালে আমার কাস্টমারের অর্ডার দেওয়া জুতো গুলো কে সেলাই করবে?

ইউটিউবে DIY বলে একটা কনসেপ্ট চলে। ‘ডু ইট ইওরসেলফ’। এই কনসেপ্ট অনুযায়ী সবাই নিজে সবকিছু করতে শেখেন। নিজে ফ্লাওয়ার ভাস বানাতে শেখেন, নিজে মই বেয়ে উঠে বাথরুমের বাল্ব বদলানো শেখেন, পাটের দড়ি দিয়ে টেবিল ক্লথ বানানো শেখেন, এরকম বহু জিনিস। যাঁরা সেই কনসেপ্ট মানেন তাঁরা সাধারণতঃ টেক স্যাভী হন এবং একা প্ল্যান করে সব ঘুরতে যান। ইন্টারনেটে সবই আছে। কোন ওয়েবসাইট থেকে পারমিট বার করবেন, কোন হোটেলে থাকবেন, গাড়ি-জিপসি ইত্যাদি বুকিংয়ের ডিটেইলস ইত্যাদি, গুগলে সব আছে, অতএব চিন্তা নাস্তি।

৬) কি সাহসী কি বীর!

Dawajhandi 4 at Kanha morning

প্রশ্ন : জিপগুলো খোলা? বাঘ কত কাছে ছিল? ভয় করলো না?উত্তর : জিপ খোলাই। বাঘ অনেকসময় বেশ কাছে এসে যাচ্ছিলো। মানে ওরা আসছিলো না, আমরা ওর কোলে ওঠার জন্য হাঁকপাক করছিলাম। বাঘগুলোর জন্য কষ্ট হচ্ছিলো। ভূমিকার চিনি ওরা, পিঁপড়ে হলো জিপসি গুলো। একবার একজনকে দেখা গেলো তো ব্যাস, চারদিকে খবর রটে গেল। সবাই গিয়ে চারদিক থেকে বাঘকে চেপে ধরলো। বাতাসে একটাই মন্ত্র পাক খেতে লাগলো, ‘থোড়া আগে লো, থোড়া পিছে লো’। যাঁর জিপসি বাঘের যত কাছে যেতে পারবে, সে ততো লোম দেখানো শট পাবে। নিতান্ত নিরীহ কতগুলো প্রাণী, বেশিরভাগ সময়েই মাথা নীচু করে হাঁটছে। চোখে বিরক্তি মেশানো নিস্পৃহতা। হিসেব করে আঙুলের কর গুণে ভালোবাসা হয়না। সত্যিকরে ভালোবাসলে বাঘ ছাড়াও অনেক কিছু দেবার আছে প্রকৃতির, যদি নিতে পারি।

Beautiful Kanha forest

কানহায় জঙ্গল মূলতঃ শালের। কেন্দু, বাঁশ ইত্যাদিও আছে, কুমীরের মতন ছালের ক্রোকোডাইল বার্ক ট্রি আছে, যাকে আবার স্থানীয়রা ঈশ্বর জ্ঞানে পুজো করেন।

Sambar deer

আছে বারাশিঙ্গা হরিণ, আছে রাতচরা শ্বাপদের শেষ রাতের শিকারের পরিত্রাহি চিৎকার, শিউরে ওঠা রোমাঞ্চ আর সকালেরগেট খোলার পর ফার্স্ট জিপসির গর্বিত প্রবেশ….আছে জিপসীর ভিতরে গুটিসুটি পাঁচটি মানুষ, গায়ে রিসোর্টের দেওয়া কম্বল।

Kanha forest

নীল নীল কুয়াশার ভিতর দিয়ে ঘুম ভাঙছে জঙ্গলের। ছোট্ট হরিণ ঝোপের আড়াল থেকে মাথা বার করে গাড়ি দেখছে….ওর মা একটু এগিয়ে এসে বাচ্চাকে আগলে দাঁড়ায়। লম্বা ঝোলা ল্যাজের রেকেট টেইল্ড ড্রোনগো উড়ে যাচ্ছে সুরেলা ডেকে। পাতার ফাঁক দিয়ে যখন আলো এসে পড়ে রাস্তার ওপরে, আর চিকচিকে সূর্য্য ঝিলমিল করে মোটা মোটা শালের কাণ্ডের পেছনে, তখন মনে হয় এই সৌন্দর্য্য দেখার নয়, অনুভব করার….সবাইকে সব অন্যায়ের জন্য ক্ষমা করে দেবার ইচ্ছে হয়, সবার কাছে মাথা নীচু করে ক্ষমা চেয়ে নিতে ইচ্ছে হয়। মনে হয়, ছেড়ে দাও বাপু, এই মিথ্যে মায়া মোহ….জ্ঞানী সাজার ছলনা, নির্লিপ্ত থাকার অভিনয়। বাঘের জন্য হৈচৈ করে, ‘থোড়া আগে লো, থোড়া পিছে লো’ করতে মন চায়না, মনে হয় ডিজেল জিপসির ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে বলি। শুধু বুনো হাওয়া বয়ে যাক দু’কান ছুঁয়ে, নিজের গভীরে নিজের মনের মৃত আত্মা জেগে উঠুক ভোরের সেই পবিত্রতায়।

Kanha meadow

সব পাপ, সব অনুশোচনা ধুয়ে যাক। শুকনো পাতা শব্দহীন ছন্দে ঝরে পড়ুক আমার শহুরে, হিসেবী মৃতদেহের কবরে। নিস্তব্ধ এই জঙ্গলের মাটিতে কান পেতে শুয়ে এর শ্বাসের শব্দ শুনি, ভূমিষ্ট হবার আগে মেডিকেল ডিভাইসে মা যেমন পরম আগ্রহে গর্ভস্থ সন্তানের হৃদস্পন্দন শোনেন, তেমনি ভালোবাসায়….

সম্পূর্ণ ডিটেইলড ট্রিপ ভিডিও এবং সাফারি বুকিং করার সুলুকসন্ধান

Kanha tour video and Booking details

0 comments on “Kanha Tiger Trip and a different ExperienceAdd yours →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *