পাখি দেখতে সিকিমের মানখিমে
ছোট চারচাকার গাড়িটা যখন হোমস্টের সামনে নামিয়ে দিলো, তখন দুপুর প্রায় একটা, ম্লান একটা রোদের ভাব চারদিকে । রাস্তায় আসতে আসতে দেখছিলাম পাহাড়ের গায়ে সবুজের বুনো, আদিম অগোছালো একটা চাদর পাতা । চাদরের গায়ে বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদের জড়ানো মাখানো টেক্সচার । হোমস্টের লোক হাসিমুখে অভ্যর্থনা করলো । জানালো খাবার তৈরী আছে, আমরা যেন ফ্রেশ হয়ে সালোকসংশ্লেষ শুরু করে দেই ।
পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে কয়েকটি কটেজের মতন ঘর, ঘরের লাগোয়া ব্যালকনি, ব্যালকনিতে ফুলের মেলা । ব্যালকনিতে দাঁড়ালে সামনে ঢেউখেলানো সবুজের চাদর গায়ে অলসভাবে শুয়ে আছে পাহাড় ।
গাড়ি থেকে নামতে নামতে হিসেব করছি, বিকেলের বার্ডিং টাইম ধরতে পারবো কিনা! সাধারণতঃ সকালে পাখির একটিভিটি বেশি থাকে, বিকেলে সকালের মতন অতো একটিভিটি না থাকলেও ভালোই থাকার কথা, কিন্তু ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করতে করতে রোদ আরো পরে এলো । পাহাড়ের পায়ের কাছে জড়োসড়ো হয়ে থাকা কুয়াশার পাতলা ওড়না খানি টেনে নিয়ে ক্রমশ তার নীচে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে লাগলো মানখিম ।
যাঁরা সিল্ক রুট যান, তাঁরা অনেকে যাবার পথে মানখিম অথবা আরিতারে একটা রাত থাকেন । আমাদের রেশম পথ যাবার উদ্দেশ্য ছিলোনা । এক বন্ধুর কাছে বর্ষার মানখিমের একটি ছবি দেখেছিলাম । বৃষ্টি ভেজা মানখিমের সবুজ রূপ আর রাতে আলোর সামনে জড়ো হওয়া শয়ে শয়ে মথ আর বিভিন্ন পোকার সমাহার দেখে আমার কর্ত্তামশাই ধনুকভাঙা পণ করেছিলেন, পৃথিবী উল্টে গেলেও উনি মানখিম যাবেনই । বর্ষায় পৃথিবী উল্টালোনা । নভেম্বরে এলো পূর্ব সিকিমের এই স্বল্পচেনা স্থানটিতে দুটি রাত কাটাবার সুযোগ ।
শেয়ার জীপে রেনক স্ট্যান্ড অব্দি এলাম, এখান থেকে ছোট গাড়ি রিজার্ভ করে মানখিম । পথে পড়লো হোটেলবহুল আরিতার । আরিতারে থাকলে আরিতারে লেকে ঘোরাঘুরি, বোটিং ইত্যাদি করা যায়, মানখিম থেকেও আরিতার ঘুরে নেওয়া যায় । আমাদের সেই সময় বা ইচ্ছে ছিলোনা বলে এযাত্রায় আরিতার বাদ পড়লো ।
মানখিম গিয়ে বিকেল টুকু টুকটাক চারপাশ দেখে কাটিয়ে দিলাম । পাখিও কিছু নজরে এলো, কিছু ছবি হলো । তবে টুক করে সন্ধ্যে নেমে পড়লো, শিরশিরে হাওয়া কাঁপিয়ে দিলো ভিতর থেকে । রাত যত গভীর হয়, বাইরে আলোর সামনে ততো বিচিত্র ডিজাইনের মথ এসে জড়ো হয় । কর্ত্তামশাই কান এঁটো করা হাসি হেসে ক্যামেরা, ফ্ল্যাশ, ডিফিউজার নিয়ে বেরিয়ে গেলেন । আমি চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগলাম সকাল হবার জন্য ।
সকাল তো হলো, কিন্তু প্রচন্ড কুয়াশা । মনখারাপ হয়ে গেলো, এতো কুয়াশায় পাখির এক্টিভিটিও থাকবে না আর ছবিও হবেনা । তবু বেরোলাম, মখমলি রাস্তা, রাস্তার হেয়ার পিন বেন্ড । সবুজের গায়ে গায়ে সাদা কুয়াশার জালি জালি ওড়না । পাখির জন্য নির্ধারিত লেন্স টা পাল্টালাম । কয়েকটা এই কুয়াশামাখা মায়াবী ল্যান্ডস্কেপ নিলাম । পাখির খোঁজে এসেছি সত্যি, কিন্তু এই মনকেমন পাহাড়ী সৌন্দর্য্য, এই মেঘমেদুর আদরমাখা সহজ উদাত্ত সবুজ….এতো অস্বীকার করার নয় আর কোন জাতীয় গাছে পাখির ফ্রিকোয়েন্ট একটিভিটি সেটাও জানার বিষয় ।
এই অঞ্চলের মূল হ্যাবিটেট হলো টেম্পেরেট ফরেস্ট অর্থাৎ নিরক্ষীয় এবং মেরু অঞ্চলের মাঝের অংশের অরণ্য যেখানে অপেক্ষাকৃত শীতলতর গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো হিমাঙ্কের নিচে থাকে । নভেম্বরে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে গোলাপী ফুলে ভরে আছে বিশাল চেরী গাছ । পাখির আনাগোনা ওই গাছেই সবচেয়ে বেশি । হোমস্টের ভিতরে একটি গাছে বার বার ঝাঁক বেঁধে আসছে বাদামি শরীর কালো মাথার রুফাস সিবিয়ার দল । ছোট চেরীফল এবং গাছের গায়ের ছোট পোকা এদের প্রধান খাদ্য । খুব জোরালো এদের গলার শব্দ ।
ছোট ঝোপজাতীয় গাছে তিড়িং বিড়িং নাচছে গ্রিন-ব্যাকড টিট, ব্ল্যাক-থ্রোটেড বুশটিট এবং গ্রে হুডেড ওয়ারবলারের দল । টিট এবং ওয়ারবলার প্রজাতির মধ্যে এরা সবচেয়ে বেশি কমন একটু বেশি ঠান্ডার জায়গায় এদের অবাধ বিচরণ । ছবি নেওয়া বেশ শক্ত কারণ হলো ওদের প্রচন্ড ছটফটে স্বভাব । এডালে বসেছে, লেন্স তাক করলাম । ভিউফাইন্ডারে চোখ দিয়ে দেখি নেই । আবার অন্ধের মতন হাতড়ে হয়তো পাশের ডালে পাতার ফাঁকে পেলাম, তাও অন্ধকারে । ক্যামেরার সেটিং একটু এডজাস্ট করতে গিয়ে দেখি উনি আবার নিচের ডালে বসে পোকা নিয়ে বিজি হয়ে পড়েছেন । এবার তাকে তুলতে গেলে আমাকে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে । বেতো শরীর নিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম, জামায় প্যান্টে কাদা । অমনি তিনি ওপর ডালে সূর্য্যরশ্মি মাখছেন ডানায় । একেবারে যাচ্ছেতাই কেলেঙ্কারি অবস্থা । এই পাখিদের লাফালাফি আর হাঁটাহাঁটি প্রসঙ্গে একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো –
১) যেসব পাখিরা বেশি ঘাড় ঘোরাতে পারে, তাদের মধ্যে এই ছটফটে ভাবটা কম, কারণ তারা অনায়াসেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিতে পারে শত্রুর আক্রমণের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা । ছোট পাখিগুলির মধ্যে এই ঘাড়ের ফ্লেক্সিবিলিটি নামক বস্তুটি কম । এদের দৃষ্টির রেঞ্জ খুব বেশি প্রসারিত হয়না যার ফলে আশেপাশে দেখতে হলে এদের পুরো শরীরটাই ঘোরানোর প্রয়োজন পরে ।
২) বড়ো এবং ভারী শরীরের পাখি গুলির থেকে ছোট পাখিগুলির শরীর অনেক হালকা হয়, তাই এরা লাফালাফি করতে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ।
৩) টিট, ওয়ারবলার, ফিঞ্চ, মুনিয়া জাতীয় ছোট পাখিরা বেশির ভাগ গাছের ডালে থাকে । এক ডাল থেকে অন্য ডালে যাবার জন্য লাফিয়ে যাওয়াটাই এদের পক্ষে সুবিধাজনক হয় তাই সেই স্বাভাবিক আচরণ থেকে এদের মধ্যে ছটফটে ভাবটা চলে আসে ।
ব্যালকনি থেকে যতদূর চোখ যায় নিশ্চুপ পাহাড় । কুয়াশা মাখা সকালে যখন বেরোলাম সবাই গুটিসুটি ঘুমাচ্ছে । ইলেক্ট্রিকের তারে বসে আছে কালো, বাদামি আর সাদা শরীরের তিনরঙা লং টেলড শ্রাইক । খুব কমন, সারা রাজ্যেই মোটামুটি অনেক দেখা যায় । ছবি নিলাম না, দেখছি কেবল । ব্যাকড্রপে মরা গাছ । একটা গাছের মগডালে চিরচেনা শালিখ, বুলবুলি তার সাথে তীক্ষ্ণ সুরেলা শিস দিয়ে এসে বসলো ব্লু হুইসলিং থ্রাশ । ক্যামেলের রঙের বাক্সে প্রুশিয়ান ব্লু বলে একটা রং আছে । প্রুশিয়ান ব্লু গভীর রাতের আকাশের রং । খালি চোখে আকাশকে দেখলে মনে হয় কালো, কিন্তু ছোটবেলা থেকে আঁকার মাস্টারমশাই বলে এসেছেন কালো না, প্রুশিয়ান ব্লু দিয়ে করবি রাতের আকাশ , তাহলে গভীরতা টা ধরতে পারবি । হলুদ ঠোঁটের ব্লু হুইসলিং থ্রাশ ছোটবেলার আঁকা এক টুকরো রাতের আকাশ যেন । দূরবীনে চোখ রাখলে এর গায়ের হালকা নীল বুটিদার টেক্সচার চোখে পরে ।
হোমস্টের সামনে একফালি জায়গায় কিছু ফুলগাছ লাগানো, তার সামনে বেড়া দেওয়া । বাঁশের কঞ্চির ওপর গর্বিত বুক ফুলিয়ে বসে আছে অলিভ ব্যাকড পিপীট । নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে পৃষ্ঠদেশ জলপাই রঙের । পিপিটের শারীরিক গঠন দেখে কেন যেন বাঁটুল দি গ্রেটের গর্বিত বক্ষের কথা মনে পরে । হয়তো আমার অতিরিক্তমাত্রায় কার্টুনপ্রিয় মনোভাব এর জন্য দায়ী ।
এরপর সেই সপ্রতিভ মেয়েটির সাথে দেখা হলো । আগেও সিকিমে এনাকে পেয়েছি । যেভাবে চাই, যতভাবে চাই উনি সবরকম পোজ দেবেন । ব্লু ফ্রন্টেড রেডস্টার্ট ফিমেল । সারাদিন বহুবার একই গাছে, একই ডালে পাওয়া গেলো ।
বুলবুলি পাখি যেটা আমরা সর্বত্র দেখি তার পশ্চাৎদেশ লাল । পোশাকি নাম রেড ভেন্টেড বুলবুল । ভেন্ট কাকে বলে সেটা ওই লাল মার্কিং দেখলে সহজেই বোঝা যায় ।
এছাড়াও ব্ল্যাক বুলবুলের একটি ঝাঁক গাছের মাথায় আমোদ আল্হাদ করছে দেখতে পেলাম । এগুলির সাইজ রেড ভেন্টেডের চেয়ে কিছু বড়ো । কমলা ঠোঁট আর ধূসর এবং কালোয় মোড়া শরীর । কিছু বাচ্চা স্নান করে চুল আঁচড়ায় না, তখন তাদের চুল খাড়া খাড়া হয়ে থাকে, ব্ল্যাক বুলবুলের মাথাটি অনেকটা তেমন আবার হিমালয়ান বুলবুল ঠিক উল্টোটা ।
তার মাথাটিতে একেবারে পরিপাটি আঁচড়ানো ঝুঁটি । অনেকটা আমাদের হার্জে বাবুর টিনটিনের মাথার মতন । সারাদিনই বিভিন্ন গাছে ভালো জোড়ায় বা একা শান্ত সমাহিত গম্ভীর ভঙ্গিতে পেলাম হিমালয়ান বুলবুল । গালে সাদা গালপাট্টা থাকার দরুন হোয়াইট চিক্ড বুলবুল ও বলা হয় একে ।
হাঁড়িচাচা বা রুফাস ট্রিপাই আমাদের সমতলে যেমন খুব কমন তেমনি পাহাড়ে কমন এরই এক জ্ঞাতিভাই, নাম গ্রে ট্রিপাই । ঝট করে দেখলে কাক মনে হয়, কিন্তু আসলে এরা কাক পরিবারের কিন্তু কাক নয় । গাছের ফল, ছোট পোকা ইত্যাদি খায় । কাক পরিবারের হওয়ার দরুন হৈচৈ করার অভ্যাসটি বেশ ভালোই ।
এরপর পেলাম সাদা কালো শরীরের একটি পুরুষ গ্রে বুশচ্যাট এবং একটি ব্লু ফ্রন্টেড রেডস্টার্ট পুরুষকে । কুয়াশার কারণে খুব ভালো কিছু ছবি পেলাম না ।
একটি বাঁশ জাতীয় গাছের ডালে আর পাতার ফাঁকে পেলাম ছটফটে হিউম’স লিফ ওয়ারবলারকে । পাশে চেরী গাছের মাথা দখল করে সমানে কাওতালি করে চলেছে রুফাস সিবিয়ারা আর অপেক্ষাকৃত নিচু ডালে টুনটুনি আর টিটের এক্কাদোক্কা খেলা ।
বিদেশী সিনেমার রানীদের যেমন ভূমিস্পর্শকরা ফ্লেয়ারি গাউন জাতীয় পোশাক থাকে, গাছের মগডালে তেমনি চমৎকার ল্যাজ আর মাথায় সুক্ষ টিকি ঝুলিয়ে বসে আছে হেয়ার ক্রেস্টেড ড্রোনগো । আমাদের পাড়ার ফিঙে পাখির একটু রূপবান ভার্সন । পাড়ার ফিঙের মতনই নকলনবিশ ।
মাথা উঁচু করে ওই রুফাস সিবিয়াদের দেখতে দেখতে হঠাৎ নজরে পড়লো আকাশে বেশ উঁচু দিয়ে ডানা মেলে উড়ছে ওরিয়েন্টাল হানি বাজার্ড । লম্বা ল্যাজ, মুখের গঠনও অন্যান্য ড়্যাপ্টারদের মতন নয় । ড়্যাপ্টার মানে শিকারী পাখি অর্থাৎ যারা অন্য পাখিকে মেরে খায় ।
মানখিমের সবকটি হোমস্টের ওপরে একটি কমন সিঁড়ি আছে । সেই সিঁড়ি দিয়ে অনেকগুলি হোমস্টে যুক্ত এবং ওই সিঁড়ি পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত মন্দির পর্যন্ত গিয়েছে । সিঁড়ির ওপরে উঠলে নিচে উপত্যকা, পাহাড়ী গ্রাম এবং আরিতার লেক দেখা যায় । লেকের অনেক ওপরে পাহাড়ের মধ্যে একটি গুমফা আছে, সেটিও দেখা যায় । মানখিমে ইন্টারনেট নেই আর ফোনের লাইনও আসে যায় হাওয়া খায় টাইপের ।
দুপুরে পাহাড়ের ধার ঘেঁষে বার্ডিং করতে করতে আচমকা চোখে পড়লো সিঁড়ির ওপরের দিকে অনেকগুলি ইয়েলোনেপড । ওনারা গ্রেটার না লেসার এতো দূর থেকে বুঝতে পারছিনা । মাথার পেছনে হলুদ ঝুঁটি আর গাছের গায়ে ঠকঠক শব্দ শুনে দৌড় মারলাম সেদিকে । পাহাড়ী উঁচু সিঁড়ি, বেতো হাঁটু সব ব্লার হয়ে গেলো নিমেষে, কেবল দৌড় । শেষে যখন এসে পৌঁছালাম ঘটনাস্থলে তখন ওনারা অধিকাংশই গায়েব, দুই একজনকে চাক্ষুষ করলাম ।
পাশের গাছে তুমুল হৈচৈ করছে স্ট্রেটেড লাফিংথ্রাসের দল । কিছু মানুষ থাকেন বন্ধুবান্ধব সমেত খুব ফুর্তিবাজ হল্লাবাজ টাইপের । এই পাখির দলটি সবসময় তেমনি খুশিয়াল । হৈহৈ করতে করতে পাহাড়ের ওপরের ধাপ থেকে নিচের ধাপে নামতে লাগলো । মানখিমে এই সিঁড়ির ওপরে উঠলে নেট পাওয়া যায় । টুংটাং করে মেসেঞ্জার, হোয়াটসএপ, ইমেল আসছে । দুদিনের জমা সব, দুদিন সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিলাম । হঠাৎ ওই অন্তর্জালের আহ্বানে একটু দাঁড়িয়ে গেলাম । সিঁড়ির ওপর কর্ত্তামশাই এসে বললেন ‘আরো ওপরে উঠবে নাকি?’ মাথা নাড়লাম, ‘এখানেই অপেক্ষা করি একটু!’ তাছাড়া সাথে ছোট ছেলে, সে অতো ওপরে উঠতে পারবে না । উনি ক্যামেরা নিয়ে চলে গেলেন, ফিরে আসার পর ওনার কাছে শুনেছিলাম রংচঙে হিমালয়ান বার্বেটের একটা দড়ির সাথে নিজের পা আটকে উল্টো হয়ে দোল খাবার গল্প ।
নামার সময় সিঁড়ির পথ না ধরে পাহাড়ের পাকদন্ডী পথ বেয়ে নামতে লাগলাম । গাছের গা বেয়ে উঠছে হজসন’স ট্রি-ক্রিপার । সারাদিন গাছের গা বেয়ে কেবল ওঠে, কিছুদূর উঠে আবার হুশ করে নিচে নামে, আবার ওঠে । গাছের থেকে ছোট পোকা খায় । দেহের যা বাহার তাতে সহজেই গাছের গায়ে মিশে যায়, আইডেন্টিফাই করা কষ্টকর ।
ঝুপ ঝুপ শব্দ শুনে হঠাৎ একটু নিচের দিকে একটা গাছে দেখলাম লাল কাজল পড়া নীলচে সবুজ শরীরের গ্রিন বিল্ড মালকোহা । এটি কাক্কু অর্থাৎ কোকিল পরিবারভুক্ত ।
যে কয়টি পাখির নাম বললাম সাকুল্যে প্রায় সবকটির চরণ ‘আনিসডাকটাইল’ জাতীয় অর্থাৎ পায়ের চারটি আঙুলের অবস্থান ৩:১ টাইপের মানে ইনার, মিডল এবং আউটার টো একসাথে এবং হিন্ড টো আলাদা পেছনের দিকে । কিন্তু ইয়েলো নেপড উডপেকার এবং এই মালকোহার চরণ কেবল ‘জাইগোড্যাকটাইল’ জাতীয় অর্থাৎ আঙুলের অবস্থান ২:২ ।
তা চরণ যেমনি হোক, ভক্তের তাতে শ্রদ্ধাভক্তি কমেনা । এই কুয়াশায় ওনারা নাচতে নাচতে বেরিয়েছিলেন বলেই তো এই অধম কয়েকজনের দর্শন পেলো, খাতায় দুটি নাম লেখা হলো । প্রকৃতির আপন গর্ভগৃহে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সেই দূতদের মনে মনে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম ।
Wonderful description.
Thank you very much