গতবছর ডিসেম্বরে মুম্বই যাবার আগে একসাথে এত ফ্লেমিংগো দেখিনি। সেবারপ্রতিদিন এত গাদা গাদা লেসার ফ্লেমিংগো এবং স্বল্প হলেও স্বতন্ত্র অভিজাতচেহারার গ্রেটার ফ্লেমিংগো দেখেছি যে মন ভরে গেছে। ছবিও তুলেছিলাম প্রচুর।কিন্তু সে নিতান্ত ডকুমেন্টেশনের জন্য। আমি নিজেকে খুব ভালো চিত্রগ্রাহকএমন দাবি করিনি কোথাও, প্রতিটা পোস্টই অবজারভেশন ও সংগৃহীত তথ্য নির্ভর।বার্ড ওয়াচার ও বার্ড ফটোগ্রাফারের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকে। উভয়ের দেখারচোখ আলাদা। আমি ব্যক্তিগতভাবে ততটুকুই ডকুমেন্টেশন করি, যতটুকু ন্যাচারালভাবে চোখ দিয়ে দেখে বুঝে উদ্বৃত্ত থাকে। শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড বোকেহ, ভালোপার্চ, সফটওয়্যার দিয়ে আলোর প্রক্ষেপণ করে কাব্যিক ছবি তুলে প্রশংসা বাপেরাইজ পাবো সেই আশাও নেই, আর ইচ্ছের ঝুলিও আপাততঃ শুন্য। বুনো পাখিকেখাবার দিয়ে , কল বাজিয়ে, ভয় দেখিয়ে টেনে বের করে ফটো তুলে তখনই লাভ হতেপারে, যদি সে ছবি বিজ্ঞানের প্রসারজনিত কোনো সাধুসঙ্কল্পে ব্যবহার হয়। কেবলফেবুতে দিয়ে লাইক কুড়িয়ে ব্যাংকব্যালেন্সও বাড়ে না আর নৈতিকভাবেও একটুগরীব গরীব ফীল হয়!
মংলাজরিতে যাবার অভিজ্ঞতা মনে পড়ে। একদিন নৌকায় উঠেছি ক্যামেরা ছাড়া। যেখানে সকলে পা রাখেন, ওখানে বসে আছি কেবল বাইনকুলার নিয়ে, ক্যামেরা বা লেন্স হোল্ড করার যোগ্যতা তখনও ছিলোনা, এখনো নেই অতো। কিন্তু সেই যে অবজারভেশন হয়েছিল, সেটা প্রাইসলেস।
জানুয়ারিতে নাসিকে নান্দুর মদমহেশ্বর ওয়াইল্ড লাইফ স্যানচুয়ারী গেছিলাম। ওয়াচটাওয়ারের থেকে বিশাল দূরত্বে জলাশয়। কেবল ব্লক মেথডে পক্ষীগণনা চলছে। হাজার হাজার বিভিন্ন স্পিসিসের পাখি একসাথে। দূরবীনে দেখছি, ডিস্টারবেনস নেই বলে তাদের হাবভাবও নিশ্চিন্ত। একটা পার্পল হেরণ ন্যাড়া গাছের মাথায় বসে কাটিয়ে দিলো সারা বেলা। আগে যতবার দেখেছি এদের, শুধু চোখ মুখ কঠিন করে শিকার সন্ধান করছে এমনই দেখেছি। ওয়েস্টার্ন মার্শ হ্যারিয়ার জলাশয়ের মাঝে ছোট ছোট ডাঙ্গার মতন জায়গায় পায়চারি করছে, বিকেলের আলো তার ডানায়। পাশেই কালো ডানার স্টীলট! ভয়টয় নেই। হয়তো বুঝেছে যে হ্যারিয়ার মাত্রই ঝাঁপিয়ে শিকার করবে এমন নয়। হয়তো তখন তার ক্ষিদে পায়নি। বোঝেনি কেবল শক্ত ঠোঁটের জঙ্গুলে কাকের দল। তারা ক্রমাগত হ্যারিয়ারকে তাড়া করে গেছে।
একটা শিয়াল বেরোলো ঝোপের পেছন থেকে, সামনে গ্রে হেরণ। শিয়াল ছুটে এলো সেদিকে, হয়তো খাবে ভেবেছিল, কিংবা এমনি তাড়া দিয়ে সরিয়ে দিল অকারণে। যাঁরা যথার্থ বার্ডিং করেন, তাঁদের এইসবের মধ্যে এক্সেলেন্ট শট খোঁজার তাড়া থাকে, আর কেউ আছেন আমার মতন ভ্যাবলা, তাঁরা হাঁ করে দেখবেন। বিশাল লেন্স, গোদা ক্যামেরা নিয়েও চোখে দেখার বিস্ময় কাটবেনা যাঁদের কিছুতেই….
সেদিন ওই জায়গায় টোটাল ১১৪ টা মতন স্পিসিস রেকর্ড হয়েছে। ছবি উঠেছে হয়তো ১০০ র। তার মধ্যে ফেবুতে দিয়ে ‘লাভ’ সাইন পাবার মতন হয়তো একটা বা অর্ধেকটা। ফটোগ্রাফাররা বলবেন “ইট ওয়াজ অফ নো ভ্যালু” ওয়াচাররা বলবেন “এক্সেলেন্ট সাইটিং ইট ওয়াজ” আর আমার মতন সবেতেই খুশি হয়ে যাওয়া ‘হইলেই হইলো’ টাইপের বার্ড লাভাররা তাহলে কি বলবেন…..
একজন এডুকেশন অফিসার ওই গোদা গিয়ার দেখে সম্ভ্রমের সুরে জিজ্ঞেস করলেন “এক বাত বাতাও, আই.এস.ও কিতনি রাক্খু?” মনে মনে বললাম “ক্যায়া ফর্ক পারতা হ্যায়?”, মুখে বললাম “লাইট কম হ্যায়, এইট হান্ড্রেড শুড বি ওকে”
ফটোটা ডিসেম্বরে মুম্বইতে তোলা। হালকা গোলাপী শরীরের তিন ফুট লম্বা পাখিগুলি যখন ল্যান্ড করছে উড়ে এসে সেটা সত্যিই ট্রিট টু আইজ! খালি চোখে, দূরবীন দিয়ে, হাই কন্টিনিউয়াস মোডে সবরকম ভাবে তোলা হয়েছে। ফ্লেমিংগো শব্দের পর্তুগিজ অর্থ ‘লাল হাঁস’। সাধারণতঃ V শেপ বানিয়ে উড়ছিল সবাই একসাথে। সেই ওড়া আর এই টুকটাক উড়ে এসে বসার কায়দাটা আলাদা। ফরেজিং করে সারাক্ষণই প্রায়। অগভীর জলে ঈষৎ বক্র উত্থিত ঠোঁট ডুবিয়ে ফিল্টার পদ্ধতিতে জলের এলগী খায়। কাদা জল বেরিয়ে যায় ফিল্টার হয়ে আর খাদ্য থেকে যায়।
একটা ছবি দেখে অন্য একটা ছবি মাথায় আসাটা আমার একটা বদভ্যাস। একসাথে অনেক লেসার ফ্লেমিংগোর গলা নামিয়ে খাবার খোঁজা দেখে বিস্তীর্ণ উপত্যকায় গরুর দলের ঘাস খাবার কথা মনে পড়ে। জুভেনাইল বা সাবএডাল্ট হলে হালকা ধূসর বর্ণের হয় আর পূর্ণবয়স্ক হলে গোলাপী। খাবারের ক্যারটিনয়েড পিগমেন্টস এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। কোনো কোনো বৈজ্ঞানিক মনে করেন রঙের উজ্জ্বলতার ওপরে প্রজননের সাফল্য নির্ভর করে।
একটি মানুষ পাখির আত্মকথা!!!
Thanks dada