‘এক পার্টি তো বানতা হ্যায়! হাসি হাসি মুখে মহারাষ্ট্রবাসী বন্ধুদের কাছে আপিল করে যাচ্ছিলাম ক্রমাগত। বেচারারা সারা বছর সাদা ধূসর ওয়েডার দেখতে পায় । কাঠগোদাম স্টেশনে নেমে ইস্তক ওদের ঘন্টায় ১৪০ কি.মি বেগে লাইফার হচ্ছে। উঠতে লাইফার, বসতে লাইফার, দাঁত মাজতে গিয়ে লাইফার, কুলকুচি করতে গিয়ে লাইফার। সব রঙচঙে হিমালয়ের পাখি, হেভী ব্যাপার! ওঁরা বেশ খুশি সবাই। তাই আমি সুযোগ পেলেই, ‘তোদের তো মজা! খাওয়া ভাই, খাওয়া ভাই’ বলে ঘ্যানর ঘ্যানর করছিলাম।
সাত্তালের ট্রেল । মাথার অনেক ওপরে বিশাল গাছের পাতার ক্যানপি। টিট, ওয়ার্বলার যা আসছে ওঁরা জান লড়িয়ে দিচ্ছেন। আমরা যে কয়েকজন পশ্চিমবঙ্গের, যাঁরা একাধিকবার উত্তরবঙ্গ বা সিকিম গেছি, হাজার বার ওইসব কমন পাখিগুলি দেখা বা ফটো তোলা হয়ে গেছে, তাঁরা মুখগুলোকে ‘আপনা টাইম আয়েগা’ মার্কা করে ঘুরছি, বিশাল চাপের ব্যাপার। এমনসময় স্কারলেট মিনিভেট এল। আবার সেই, কমন পাখি! হতাশ হয়ে হাত উল্টালাম। মাঝারি মাপের লাল পাখিটি এসে বসলো ডালে, সতর্ক ছটফটে ভঙ্গী। মারাঠি বন্ধুরা লাল পাখি দেখে আনন্দে বিহবল, ইতিমধ্যে আবার হলুদ রঙের স্ত্রী পাখিটিও এসে বসলো একেবারে কাছের একটি ডালে। একজন কো-অর্ডিনেটর বাইনোকুলার লাগিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখছেন, হঠাৎ বললেন ‘ইসকি তো ব্রুড প্যাচ হ্যায়, এন্ড্রিলা জারা ফটো নিকালো ইসকি’।আর সে বলতে হবেনা, আমার এই একটু অন্যরকমের বিহেভিয়ার বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি খুবই আগ্রহ, সে কমন পাখি হলেও কোনো ব্যাপার নয়। ফটাফট বন্দুকের গুলির মতন ঝর ঝর করে শাটারের আওয়াজে ক্যামেরাবন্দী হলো হাজারিকা বা স্কারলেট মিনিভেট মেল ফিমেল জুটি।
এবার আসি, ব্রুড প্যাচের প্রসঙ্গে। পেটের নীচের দিকে কিছুটা জায়গায় পালক নেই বা কমে এসেছে। পুরুষ পাখিটির উজ্জ্বল গায়ের রঙের দরুন আরো বেশী বোঝা যায়।মেয়েটিরও আছে, কিন্তু অতটা বোঝা যাচ্ছেনা। ডিমে তা দেওয়ার সময় সরাসরি ওই জায়গার রক্তধমনীর উষ্ণতা ডিমে ট্রান্সফার করতে পারে, সেইজন্য ওই জায়গার পালক খসে যায়। নেসটিঙের সময় পাখির এইরকম প্যাচ দেখা যায়। ব্রুড প্যাচ আছে, এরকম পাখিকে ডিস্টার্ব করা বা রিংগিং, ট্যাগিং, ফ্ল্যাগিং ইত্যাদি কারণে ধরা অনুচিত। খাবারের খোঁজে বেরিয়েছে, কিন্তু বাসায় ডিম রেখে এসেছে হয়তো। এসময় এদের বিহেভিয়ার লক্ষ্য করলেও দেখা যায়, একটু বেশী চঞ্চল, একটু বেশী বাড়ি ফেরার তাড়াহুড়ো। সাধারণতঃ একই জুটির স্ত্রী ও পুরুষ পাখি একসাথে বাসায় ডিম ছেড়ে যায়না। তাহলে হতে পারে ছবির স্ত্রী পাখিটি এই জুটির নয়।
তুচ্ছ সামান্য ব্যাপার, হয়তো অনেকেই জানেন। কিন্তু আগে শোনা থাকলেও ব্রুড প্যাচের ছবি আমার ছিলোনা। নতুন স্পিসিস পেলে লাইফার হয়, কিন্তু পুরোনো স্পিসিসের ডিস্টিনকট বিহেভিয়ার বা ফিজিক্যাল ফিচার পেলে আমার লাইফার পাবার চেয়ে বেশী আনন্দ হয়। আমার যা এক্সপিরিয়েন্স, যতটা সীমিত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, তাতে একটা নতুন জায়গায় গেলে বালতি বালতি লাইফার হয়েই যাবে, কিন্তু ওই শিওর শট উল্লাসে সেই তৃপ্তি নেই, যেটা চেনা স্পিসিসকে নতুন ভাবে দেখার মধ্যে আছে।
0 comments on “Scarlet Minivet”Add yours →