Cause of decreasing the number of house sparrow
অনেকরকমের চড়াইয়ের মধ্যে আমাদের চারপাশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় House Sparrow মানে একেবারে পাতি বাংলার চড়াই পাখি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যার উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। উপেন্দ্রকিশোরের বিখ্যাত শিশুসাহিত্যের হিরো যে টুনটুনি, তাকে কোথাও কোথাও সাইড হয়ে যেতে হয়েছে চড়াইয়ের দাপটে। এহেন পাখিটি হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আগে যত চড়াই দেখা যেত একসাথে দল বেঁধে হুটোপাটি করছে আজকাল আর তত দেখা যায়না। একপেশে একটা যুক্তি আছে যে মোবাইল টাওয়ারের জন্য চড়াই শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তলিয়ে ভাবলে দেখা যায় চড়াই কমে আসার আরো কিছু কারণ আছে।
১) বাড়ির বাড়তি ভাত, চালের মধ্যে বাছাই করা ধান এইসব আগে ড্রেনের পাশে
এদিক ওদিক ফেলা হতো, চড়াই মূলতঃ দানা জাতীয় খাবার খায়। ওই দিয়ে দিব্যি সুখে
শান্তিতে খেয়ে পড়ে বাঁচত ওরা।
উত্তর স্বচ্ছ ভারত যুগে ওসব সেকেলে নোংরা ব্যাপার কেউ করেনা। এক্সট্রা খাবার প্লাস্টিকে বা কাগজে র্যাপ করে ডাস্টবিনে ফেলে আর গম বা ধান ঝাড়াই করার গল্প তো কবেই মিটে গেছে।
২) খেয়াল করলে দেখা যায় চড়াইয়ের দল রাস্তার পাশে ধুলোর মধ্যে ডাস্টবাথ করে। আজকাল নগরীকরণের যুগ, চওড়া কংক্রিটের রাস্তা, ধূলিস্নান করার জায়গা কোথায় পাবে তারা!
৩) চড়াই বড়ো গাছের থেকেও ছোট ঝোপ জাতীয় গাছে বেশি থাকে। বাসা বানানোর সুবিধা প্লাস রোদের থেকে ছায়া। তারপর ছোট ঝোপ জাতীয় গাছের বীজ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়। কিন্তু আজকাল রাজপথের পাশে কোথায় সেই ঝোপ! ওসব কেটে সাফ করে প্রয়োজনমতন কংক্রিটের বাড়ি, পথঘাট বানিয়ে সুবিধামতন জায়গায় কয়েকটা দামী অভিজাত বৃক্ষ জাতীয় গাছ বা বাহারী গোলাপ বাগান করে দিলে, ব্যাস….আধুনিক ইমারতও হলো আবার ‘গো গ্রীন’ ও হলো।
আমাদের ছোট বাড়ি ছিল, বারান্দাটি ছিল খোলা। এসবেস্টস লাগানো। ওই কাঠের বীম আর এসবেস্টসের ঢেউ খেলানো ফোঁকর টুকুতে দিব্যি একটি চড়াইয়ের নাইট রুসটিঙ্গের জায়গা হয়ে যেত। দিদিমা বলতেন চড়াই পাখি লক্ষী, কক্ষণো তাড়াতে নেই। সারা বারান্দা পটি করে ভরাতো। আমরা কেউ বিরক্ত হতাম না। সকালে পরিষ্কার করতাম। ওরা আমাদেরই বাড়ির লোকের মতন থাকতো। প্রজননকালে এদিক ওদিক ফেলে দেওয়া প্যাকিং বাক্সের ভিতর খড়কুটো দিয়ে বাসা বানাতো। ছানা বড়ো হয়ে গেলে চলে যেত। অভ্যস্ত আটপৌরে জীবনযাপন ছিল ওদের মানুষের সাথে। তারপর একদিন সে ছোট জীর্ণ বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট হয়ে গেল, আমরা ছোট বাড়ি ছেড়ে বড়ো ফ্ল্যাটে ঢুকলাম, ওদের মুখের ওপর দরজা সজোরে বন্ধ করে দিয়ে।
এখন প্রায়শ্চিত্তের মতন ছাদে বা বারান্দায় একটু দানাশষ্য আর জল রাখি। ওরা কেউ কেউ আসে, কিন্তু অন্য পাখির আনাগোনাই বেশি। ওরা আসে একটি বা দুটি। অপেক্ষা করি, একদিন দল বেঁধে ওরা আসবে, ধুলোয় লুটোপুটি খাবে, ঝাঁপিয়ে আসবে জলের পাত্রে, খাবারের বাটিতে, জামাকাপড় মেলার দড়িতে বসে চিরিক চিরিক ডাকবে। মা আমাকে জানলার কাছে পড়তে বসিয়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে বলবে, ‘দড়িতে শাড়ি মেলা আছে। খেয়াল রাখবি আমার শাড়িতে যেন পায়খানা না করে, এলেই তাড়িয়ে দিবি’….সব যদি আগেকার মতন হতো, একদম আমার ছোটবেলার মতন…. হ্যাঁ মা এলেই হুস হুস করে তাড়িয়ে দেব, ইয়েস….কিন্তু আসুক তো আগে….
0 comments on “Sparrow Harrowing”Add yours →